বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হলেও এদেশের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১% ভাগেরও কম মানুষ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে। কি হতে পারে এর কারণ। ব্যাংকিং টাচ্ আজ আমরা ক্রেডিট কার্ড এর ব্যবহারের প্রতি মানুষের অনীহারে কারণ বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করব।
যোগ্যতা
ও প্রতিবন্ধকতা
ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করার ক্ষেত্রে ব্যাংক একজন গ্রাহকের এর বিভিন্ন তথ্য নিবিড় ভাবে বিশ্লেষণ করে তারপর তাকে কার্ড প্রদান করে থাকে। যেমন ব্যক্তির পেশা, পদবী, কর্মসংস্থান, বেতনের পরিমান ইত্যাদি।
বর্তমানে বাংলাদেশের যেসকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে থাকে তারা সাধারণত ২০ হাজার টাকা ন্যূনতম বেতন বা তার উপরে হলে তবেই তার আবেদন গ্রহণ করে থাকে। আমাদের দেশের অধিকাংষ মানুষের আয় এই সীমার নিচে। যার ফলে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার স্বপ্ন থাকলেও প্রথম ধাপেই আবেদন করার যোগ্যতা হারান অনেকেই।
বেতনের পাশাপাশি আরেকটি প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় পদবী। কারন বেশকিছু ব্যাংক প্রার্থীর সংশ্লিষ্ট কর্মরত প্রতিষ্ঠান তার পদবী লক্ষ্য করে থাকেন।যেমন ধরুন আপনার বেতন ২০ হাজার টাকার উপরে, আপনি প্রথম স্টেপে উত্তীর্ণ। কিন্তু আপনি আপনি একটি পোশাক ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন এখানে আপনার পদবী হচ্ছে অপারেটর বা সমমর্যাদার অন্যকিছু। সেক্ষেত্রে ব্যাংক আপনার আবেদনটি বাতিল করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে কিছুকিছু ব্যাংক আপনাকে ছাড়ও দিতে পারে।
আপনার কর্মসংস্থান এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আপনার কর্মরত প্রতিষ্ঠানটি অবশ্যই দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী বৈধ ও নিবন্ধিত একটি প্রতিষ্ঠান হতে হবে। ব্যাংক এখানে স্বনামধন্য কোম্পানিগুলো বা ব্যাপক পরিচিতি প্রাপ্ত কোম্পানিগুলোর কর্মীদেরকে অধিক অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। আবেদনকারীকে অবশ্যই উক্ত প্রতিষ্ঠানের একজন স্থায়ী কর্মী হতে হয়। আবেদনকারী বেতন অবশ্যই কোন ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে ঢুকতে হবে। অথবা ক্যাশ পেইড বেতনের ক্ষেত্ত্রে পে স্লিপ সংরক্ষণ করতে হবে।
আবেদনকারী যদি ব্যবসায়ী বা স্বনির্ভর হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই তাকে তার প্রতিষ্ঠানের বৈধ ট্রেড লাইসেন্স থাকতে হবে এবং কোম্পানির বয়স ন্যূনতম দুই বছর বা তার বেশি হতে হবে এবং ব্যাংকের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমান বা তার চেয়ে অধিক আয় ও তার প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক লেনদেন থাকতে হবে। এই শর্তগুলো অনেকেই পূরণ করতে সক্ষম হয় না যার কারণে বড় একটি অংশ এখান থেকে ঝড়ে পড়ে।
আমাদের দেশের অধিকাংশ লোকই অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মের মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে। যেমন: কৃষক, শ্রমিক, তাঁতী, জেলে, কামার, কুমার, দর্জি ইত্যাদি। যদিও এরা আমাদের সমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমরা তাদেরকে ভালোবাসি, সম্মান করি ও শ্রদ্ধা করি। তবে তাদের এই পেশা ক্রেডিট কার্ড গ্রহণের জন্য যোগ্যতা রাখে না। যার ফলস্বরূপ দেশের বড় একটা অংশ ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ করা থেকে একেবারেই বঞ্চিত।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করতে হলে তাকে অবশ্যই ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার বা টিন সার্টিফিকেট প্রদান করতে হয় কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের আয়ের সীমা অনুযায়ী অধিকাংশ মানুষ ট্যাক্স প্রদান করার জন্য উপযুক্ত নয়। যার ফলে তাদের অনেকেরই টিন সার্টিফিকেট নেই যার ফলে তারা ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন না।
এদেশের অধিকাংশ ব্যাংক এখন ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করলেও তাদের সেবা কেবল শহর এলাকা গুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। গ্রামীণ পর্যায়ে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার খুব একটা বিস্তার লাভ করতে পারেনি। গ্রামীণ পর্যায়ে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার জন্য যে সকল ইনফ্রাস্ট্রাকচার গুলো প্রয়োজন যেমন এটিএম বুথ পস মেশিন বা টার্মিনাল ইত্যাদি এখনো খুব একটা বিস্তৃত হয়নি, যার ফলে দেশের বড় বৃহত্তর একটি শ্রেণি ক্রেডিট কার্ড সেবা তো দূরের কথা, কল্পনাও করতে পারে না।
এবার আমরা আলোচনা করব যারা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার যোগ্যতা রাখেন তার পরেও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে চান না বা আগ্রহী না তার কারণটা কি? প্রথম কারণটা হচ্ছে চার্জ ও ফি। একটি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে হলে একজন কাস্টমারকে অনেকগুলো চারজ প্রদান করতে হয়। যেমন কার্ড ইস্যুয়িং ফি, বাৎসরিক নবায়ন ফি, ওভার লিমিট ফি, লেট পেমেন্ট ফি, ক্যাশ এ্যাডভান্স ফি, এসএমএস এলার্ট ফি ইত্যাদি। কেবল এখানেই শেষ নয় গ্রেস পিরিয়ডের মধ্যে ক্রেডিট কার্ড থেকে খরচকৃত টাকা ব্যাংকে ফেরত না দিলে নির্দিষ্ট হারে ইন্টারেস্ট প্রদান করতে হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের ক্রেডিট কার্ডের বাৎসরিক ইন্টারেস্ট হার ২০ শতাংশ। যেখানে অন্যান্য ঋণের ইন্টারেস্ট রেট সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। এখানে অধিক ফি ও ইন্টারেস্ট দিয়ে অনেকেই কার্ড ব্যবহার করতে একেবারেই অনিচ্ছুক যার কারণে অনেকেই যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করেন না।
দ্বিতীয়ত ধর্মীয় দৃষ্টিকোন । বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় অনেকেই ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে চান। কারন তাদের মতে এখানে সুদ জড়িত রয়েছে বা থাকতে পারে। আর সুদ ইসলামে হারাম বা নিষিদ্ধ।
অনেকে আবার ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ করলেও পরে সেটি আবার সারান্ডার করেন এর লক্ষ্যনীয় কারণ হচ্ছে ব্যাংকের প্রতিনিধি কাস্টমারের কাছে কার্ডের কিছু কিছু তথ্য গোপন রাখা। যার ফলস্বরূপ ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ করার পর উক্ত গ্রাহকের ভেতর ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণা চলে আসে। ব্যাংকের সেলস পারসন তাদের টার্গেট পূরণের জন্য কাস্টমারের কাছে অনেক সময় অনেক তথ্য বিশেষ করে চার্জ সংক্রান্ত তথ্য গোপন করে থাকেন। যার ফলে অনেক সময় কাস্টমারের অজান্তেই ক্রেডিট কার্ডে কোন চার্জ আরোপ হয়ে যায়। এটি পরবর্তীতে কাস্টমারের কাছে বিব্রতকর বলে মনে। অনেকে আবার এই চার্জগুলোকে হিডেন চার্জ বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। যদিও অনেক সময় দেখা যায় এগুলো হিডন চার্জ নয়, কিন্তু কাস্টমারকে তথ্যগুলো সঠিক ভাবে না জানিয়ে বিভ্রান্ত করা হয়েছিল।
সম্মানিত
সুধী উপরোক্ত কারণগুলো ছাড়াও আরো অনেক কারণ থাকতে পারে যার কারণে হয়তো বাংলাদেশে
ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার খুব একটা বিস্তার লাভ করতে পারেনি। আপনাদের মধ্যে যারা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে আগ্রহী তারা অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কার্ড টি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে তার ফি, সেবার ধরন, শর্তাবলী ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে কার্ড গ্রহণ করবেন ।
টাচে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের উন্মুক্ত এই অনলাইন পরিষেবাকে সৃজনশীলতার মঞ্চ হিসেবে বাঁচিয়ে রাখতে বদ্ধ পরিকর। আমরা আপনাদের নিকট হতে ব্যাংকিং ও আর্থিক বিষয়ক শৈল্পিক, শিক্ষামূলক, ডকুমেন্টারি, গবেষণামূলক বা বৈজ্ঞানিক আলোচনা সংক্রান্ত কন্টেন্ট বা যেসব কন্টেন্ট থেকে জনগণ উপকৃত হন এমন সব কন্টেন্ট প্রত্যাশা করি। আপনার মূল্যবান কন্টেন্ট আমাদের কাছে পাঠাতে ই-মেইল করুন [email protected] এই ঠিকানায়। | |||
আপনার একটু সমর্থনই আমাদের এগিয়ে চলা ও আরও ভাল কিছু করার অনুপ্রেরণা যোগায়। আপনার মূল্যবান সমর্থনটি জানাতে ভিজিট করুন আমাদের সমাজিক যোগযোগের পেজগুলোতে ও লাইক, ফলো ও সাবস্ক্রইব করে আমাদের সাথে থাকুন। ধন্যবাদ | |||
কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। বিস্তারিত....... |