সম্প্রতি আলোচনা/সমালোচনার শীর্ষে ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যাবস্থা। বাংলাদেশে বর্তমানে ৬১ টি ব্যাংকের অপারেশন চলমান। দশটি ইসলামিক ব্যাংক ছাড়াও অন্যান্য প্রচলিত ব্যাংকগুলোও পাশাপাশী খুলছে ইসলামিক ব্যাংকিং উইন্ডো। বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়াতে দেশ ইসলামিক ব্যাংকিং খুব দ্রুত বিস্তার লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। ইসলাম ধর্মে “রিবা” বা সুদকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করায় এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান ইসলামিক শরিয়াভিত্তিক পরিচালিত ব্যাংকিং এর অধীনে সুদ মুক্ত লেনদেনের একটু নিরাপদ স্থান ভীষণভাবে প্রত্যাশা করে।
ইসলামী ব্যাংক গ্রাহকের কাছ থেকে সাধারনত মুদারাবা প্রিন্সিপাল ভিত্তিতে ডিপোজিট সংগ্রহ করে। এটি একটি শরীয়তসম্মত অংশীদারি চুক্তি। ইসলামী ব্যাংক থেকে ইনভেস্টমেন্ট বা বিনিয়েগ পাওয়ার জন্য ক্রয়- বিক্রয় নীতিমালার কথা থাকলেও তা কি আদৌ বাস্তবায়িত হচ্ছে নাকি কেবল কাগজ-কলমের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে?
দেশে পরিচালিত ইসলামী ব্যাংকগুলোর থেকে সাধারণ মানুষ ক্ষুদ্র বিনিয়োগ পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য বিষয়। ইসলামী ব্যাংকগুলোর ডিপোজিট পণ্য ইনভেস্টমেন্ট ক্যাটাগরি এমনকি কার্ড সেবা বর্তমানে যেভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে তা আমার মতে অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ। এখানে কতটুকু শরিয়া আইন মেনে ব্যাংকিং পদ্ধতিকে পরিশোধন করা হচ্ছে, সেটি দেখারই বা কর্তৃপক্ষকে?
আমরা ইসলামী ব্যাংকগুলোর সাথে ব্যাংকিং করলেও আমরা সাধারনত জানতে চাইনা বা প্রয়োজনও মনে করিনা যে কে এই ব্যাংকের মালিক বা কারা আছেন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে? আমরা যারা যারা সচেতন তারা হয়তো বড়জোর দেখি বা জানতে চাই কারা আছেন ব্যাংকের শরীয়া বোর্ডে। আমরা সাধারনত ইসলামী ব্যাংকগুলোর সাথে ব্যাংকিং করার সময় এই ব্যাংকের সুদ মুক্ত নাকি বা আসলেই শরীয়া সম্মতভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে কিনা সেটা এনালাইসিস করার দায়িত্বটা সম্পূর্ণ শরীয়া বোর্ডের উপর রেখে, তাদের ওপর আস্থা রেখে আমরা ব্যাংকের সেবা নিয়ে থাকি। দুঃখের বিষয় যে ইসলামিক ব্যাংকিং নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যাংক সমালোচনার মুখে পড়লেও শরিয়া বোর্ড থেকে কেউ সরাসরি মুখ খুলতে লক্ষ্য করিনি। ব্যাংকগুলোর এই শরীয়া বোর্ডের ক্ষমতাই বা কতটুকু? সেটাও কিন্তু আমাদের জানা প্রয়োজন। ব্যাংকগুলোকি আসলেও আমাদের টাকা নিয়ে শরিয়াসম্মত ভাবে ব্যবসা করে আমাদের সাথে প্রফিট শেয়ার করছে, যা ব্যাংকগুলোর শরীয়া সুপারভাইজরি কাউন্সিল কর্তক প্রতিনিয়ত ভেরিফাই হচ্ছে। নাকি দাবার গুটি উল্টো! শরিয়া বোর্ডগুলোকে সাইনবোর্ড হিসেবে ঝুলিয়ে রেখে তাদেরকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে সুদী কারবারের জন্য হালাল সার্টিফিকেট নিয়ে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে?
ইসলামী ব্যাংকিং যদি আমাদেরকে সুদের হাত থেকে রক্ষা করতে না পারে তবে সেই ইসলামিক ব্যাংকিং থাকা না থাকার মধ্যে কোন তফাৎ নেই। প্রায় বেশিরভাগ ব্যাংকের শরীয়া বোর্ডে দেশের স্বনামধন্য আলেমগণ আছেন। যাদের প্রতি মানুষের আস্থা এবং ভালোবাসা অবিরাম। কোন ইসলামী ব্যাংক বা ইসলামিক ব্যাংকিং উইন্ডো এর শরীয়া বোর্ড সুদ মুক্ত ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয় তাহলে অন্ততপক্ষে তাদের শরীয়া বোর্ড থেকে পদত্যাগ করা উচিত। কারণ দেশের মানুষ ব্যাংক দেখে নয়, ব্যাংকের মালিক বা ডিরেক্টরদের দেখে নয় কিংবা স্পন্সরদের দেখেও নয়, তারা ইসলামী ব্যাংকিংয়ের প্রতি আস্থা রাখেন শরীয়া বোর্ডের সম্মানিত আলেম/স্কলারগণদের দেখে। তাই শরীয়া বোর্ড যদি তাদের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কারণে মানুষকে সুদ মুক্ত ব্যাংকিং এর নিশ্চয়তা দিতে না পারে তাহলে অন্ততপক্ষে তাদের উচিত শরীয়া বোর্ড থেকে পদত্যাগ করে সাধারণ মানুষকে জানিয়ে দেওয়া যে, এই কারবার সুদমুক্ত নয়।
ধন্যবাদ সবাইকে ।
এস এম শামীম হাসান
জনসংযোগ কর্মকর্তা, ব্যাংকিং টাচ্
ফেসবুক: www.fb.me/shaikshamimhasan
ই-মেইল: [email protected]
ব্যাংকিং টাচে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের উন্মুক্ত এই অনলাইন পরিষেবাকে সৃজনশীলতার মঞ্চ হিসেবে বাঁচিয়ে রাখতে বদ্ধ পরিকর। আমরা আপনাদের নিকট হতে ব্যাংকিং ও আর্থিক বিষয়ক শৈল্পিক, শিক্ষামূলক, ডকুমেন্টারি, গবেষণামূলক বা বৈজ্ঞানিক আলোচনা সংক্রান্ত কন্টেন্ট বা যেসব কন্টেন্ট থেকে জনগণ উপকৃত হন এমন সব কন্টেন্ট প্রত্যাশা করি। আপনার মূল্যবান কন্টেন্ট আমাদের কাছে পাঠাতে ই-মেইল করুন [email protected] এই ঠিকানায়। | |||
আপনার একটু সমর্থনই আমাদের এগিয়ে চলা ও আরও ভাল কিছু করার অনুপ্রেরণা যোগায়। আপনার মূল্যবান সমর্থনটি জানাতে ভিজিট করুন আমাদের সমাজিক যোগযোগের পেজগুলোতে ও লাইক, ফলো ও সাবস্ক্রইব করে আমাদের সাথে থাকুন। ধন্যবাদ | |||
কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। বিস্তারিত....... |